কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

দালালের হাত ধরে ঢুকছে রোহিঙ্গারা, নতুন সমীকরণে প্রত্যাবাসন

বান্দরবান জেলার পাহাড়ি অঞ্চল দিয়ে এবার রোহিঙ্গার পাশাপাশি মিয়ানমারের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনও ঢুকছে। গত ১৮ নভেম্বর বান্দরবানের ঘুমধুম বাইশফাঁড়ি সীমান্ত দিয়ে তঞ্চংগ্যা ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক মিয়ানমারের নাগরিক অনুপ্রবেশ করে উখিয়ায় অবস্থান করছিল।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতভর টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন সীমান্তে একের পর এক গোলার বিকট শব্দ শুনেছেন লোকজন। এদিকে গত ২৯ নভেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুম ধুমের তুমব্রু পশ্চিম কূল সীমান্তের কাঁটাতার লাগোয়া ওপারে ঢুরি নামক স্থানে প্রায় আড়াইশ এর বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে, এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য মিয়ানমার সীমান্তে জড়ো হওয়ার কথা উল্লেখ করেন রোহিঙ্গারা। ভিডিওতে জকির নামে একজন দালালের কথা বলতে শোনা যায়।

সীমান্তের বাসিন্দারা জানায়, রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে অনুপ্রবেশ করছে। এমনকি রাতের আঁধারে সাঁতরে বাংলাদেশে আসছে। আবার মংডুতে রোহিঙ্গাদের কেন্দ্র করে আরাকান আর্মিও বাণিজ্যে জড়িত। যে-সব রোহিঙ্গা তাদের অর্থ দিচ্ছে, তাদের বাংলাদেশ সীমান্তে আসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে তারা।

সীমান্তে বসবাসকারী রফিকুল হুদা বলেন, দালালরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে নৌকায় রোহিঙ্গাদের এপারে সীমানায় নিয়ে আসে। এর পর সুযোগ মতো গন্তব্যে পাঠানো হয়। দালালদের ধরা না হলে অনুপ্রবেশ ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ ও কঠিন হয়ে পড়বে।

শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ভয়ে রাতভর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জড়ো হয়ে বসে থাকতে হয়েছে। সীমান্তে যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখা গেছে।

টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা সৈয়দ আলম বলেন, ‘রাখাইনে যুদ্ধের নামে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হচ্ছে। এখনও মংডু শহরে তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। সেখানে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। মানুষ জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থার সদস্যরা বলছেন, বান্দরবান সীমান্তের পাহাড়ি এলাকার নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুমধুম, তুমব্রু, জামছড়ি, লেবুছড়ি, আলী কদম, পশ্চিমকুল সীমান্তে পাহাড়ি অঞ্চলসহ টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢুকছে। এসব সীমান্তে একাধিক দালাল সক্রিয় রয়েছে। তারা ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের সহায়তা করছে।

মিয়ানমারের দালালের পাশাপাশি একাধিক স্থানীয় দালালও রয়েছে। দালালদের মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের জলপাইতলী এলাকায় জকির আহমদ সিন্ডিকেট প্রধান ও কামরুল হাসান সোহেল, নুরুল আমিন ওরফে মনিয়া, মো. ইসমাইল, মো. ইব্রাহিম, সরওয়ার, দেলোয়ার; বাইশফাঁড়ির জকির আহমদ জাহাঙ্গীর, আলমগীর, শাহ আলম ওরফে রাঙ্গা শাহ আলম, মো. রাসেল, কামরুল হাসান সোহেল, ছৈয়দ আলম, উসিংলা তঞ্চংগ্যা, মংসিং তঞ্চংগ্যা ও মোবারক এর নাম উল্লেখযোগ্য।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন মনে করছেন, আগের মতো বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আরেকটি ঢল আসবে না। আসলেও সীমান্ত পেরিয়ে তাদের বাংলাদেশ ঢুকতে দেয়া যাবেনা। সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

পাঠকের মতামত: